পিলখানা ট্র্যাজেডির নয় বছর। কান্না থামেনি নিহত সেনা পরিবারের

bdr_mutiny_0
নয় বছর পেরিয়ে গেলেও সঠিক সত্য উদঘাটন হয়নি ইতিহাসের জঘন্য সেই হত্যাযেজ্ঞর। লোক দেখানো বিচারের নামে সাজা দেয়া হয়েছে ঘটনার শিকার নিস্পাপ কিছু বিডিআর জোয়ানদের। দুঃখজনকভাবে নির্মম বাস্তবতার শিকার হতে হয়েছে তাদের পরিবারগুলোকে। আর দীর্ঘ কান্না থামেনি পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নিহত সেনা সদস্যদের পরিবারগুলোর। আপনজন হারানোর কষ্ট কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের। ২৫শে ফেব্রুয়ারি একটি দুঃস্বপ্নের দিন তাদের কাছে।

পিলখানায় নিহত কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী মেহেরীন ফেরদৌস বলেন, আপনজন ছাড়া বেঁচে থাকা খুব কষ্টের। কিভাবে বেঁচে আছি জানি না। এত বছর পার হয়ে গেল তারপরও ২৫শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করা হলো না। সারা বছর আমাদের কোনো খোঁজ-খবর নেয়া হয় না। অথচ ২৫শে ফেব্রুয়ারি এলেই তোড়জোড় বেড়ে যায়। মেহেরীন ফেরদৌস বলেন, পিলখানায় নিহত শহীদদের স্মরণে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ পর্যন্ত তৈরি করা হয়নি। এ দিনটি শুধু আমাদের। আমাদেরই থাক। কাউকে এ দিনটি স্মরণ করতে হবে না। আমি ভেবেছি এ বছর কোনো কথা বলবো না। কারণ আমাদের কথা শোনার কেউ নেই। আমাদের শহীদ পরিবারগুলোর আর তো কোনো চাওয়া নেই।

পিলখানা হত্যাযজ্ঞে প্রাণ হারান কর্নেল কাজী ইমদাদুল হক। স্বামী হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ করে যাচ্ছেন ইমদাদুল হকের স্ত্রী নাজনীন হক। তিনি বলেন, কেমন আছি সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বেঁচে আছি। নয় বছর পার হয়ে গেল ইমদাদ নেই। এতগুলো বছরে একই কথা বলে আসছি। কিন্তু কোনো কথাই রাখা হয়নি। আর বলেই বা কি হবে। এতগুলো সামরিক অফিসারকে মারা হলো। অথচ ২৫শে ফেব্রুয়ারিকে শোক দিবস ঘোষণা করা হলো না। এই শোক কি শুধু আমাদের? আর কারো নয়। প্রতিবছর ২৫শে ফেব্রুয়ারি এলেই বিভিন্ন সংবাদপত্র টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যোগাযোগ করে। আমাদের বক্তব্য নেয়। অনেকক্ষেত্রে আমরা যা বলি তারা তা সঠিকভাবে তুলেও ধরে না। আবার আমাদের ভুলে যায়।

পিলখানায় নিহত মেজর মোসাদ্দেকের স্ত্রী কোহিনূর হোসেইন বলেন, প্রতিবছর ২৫শে ফেব্রুয়ারি এলে সেদিনের সেই দুঃস্মৃতি নতুন করে জেগে উঠে। মনে হয় কেন এমন হলো। এমনতো হওয়ার কথা ছিল না। প্রিয়জন হারানোর কষ্ট কি কোনো বক্তব্য দিয়ে বোঝানো যায়? এ কষ্ট শুধু একান্তের। কেউ এর ভাগ নিতে পারে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নাকি কষ্ট কমে। কিন্তু মোদাচ্ছেরের শূন্যতা তো বেড়েই চলেছে। পরিবারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে নিজেকে অসহায় লাগে। মনে হয় মোদাচ্ছের থাকলে আমারতো এ ভার বহন করতে হতো না। কিন্তু আমরা ওদের জন্য কি করতে পেরেছি? এতগুলো সেনা শহীদ হলো জাতি কি তাদের সেভাবে স্মরণ করে? জাতীয়ভাবে কি শহীদ সেনা দিবস পালন হয়? হয় না। আমরা এত বছর শুধু একটা দাবি করে আসছি ২৫শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে পালন করা হোক। সঠিক সত্য উদঘাটিত হোক। জাতির কাছে সঠিক মর্যাদায় পাক জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা। আজকের এই দিনে এটাই সকলের প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *