তোফাজ্জল হোসেন কামাল : ২১ এপ্রিল ২০১৩ সাল থেকে অক্টোবর ২০১৫ । মাঝখানে বছরের হিসেবে আড়াই বছর । আর মাসের হিসেবে ৩০ মাস । প্রথম তারিখটা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যবসা শুরুর অনুমোদন । পরেরটা এগিয়ে চলার মাইল ফলক । মূলত: ২০১৩ সালের ৩ জুন প্রথম শাখার কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমেই বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের খাতায় নাম উঠে আসে “ফারমার্স ব্যাংকের” নাম । সেই থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ব্যাংকটিকে । এক এক করে শাখার সংখ্যা বেড়ে প্রধান প্রধান নগরীসহ গ্রাহকদের দোরগোড়ায় গিয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে এখন ৩৪ টি । গ্রাহকের সেবার মান সমুন্নত রেখে এই এগিয়ে চলার পথে এখন ব্যংকটির আমানতকারী ৪৩ হাজারেরও বেশি । চলতি বছরেই আরও চারটি শাখার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে ।
গ্রাহকদের সর্বোচ্চ পণ্য ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের একটি বহুমাত্রিক , অগ্রসরমান , উৎকর্ষ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করাই ফারমার্স ব্যাংকের ভিশন ।
আর মিশন হচ্ছে, সকল শ্রেনীর গ্রাহককে বহুমুখী পণ্য ও সেবা প্রদান এবং কার্যকর , সক্ষম ও স্বচ্ছ বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্দি সুদৃঢ় করা এবং শেয়ার হোল্ডারদের সামাজিকভাবে গ্রহনযোগ্য লভ্যাংশ প্রদান করা ।
যুগপৎ ভিশন আর মিশনের সম্মিলনে ব্যাংকটি দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীলতায় ভূমিকা রেখে চলেছে । শুরু থেকেই ফারমার্স ব্যাংক জনগনের আস্থায় পরিনত হতে পেরেছে বলে দিনের পর দিন এর গ্রাহক সংখ্যা একদিকে যেমন বেড়ে চলেছে ,অপরদিকে আমানতের পরিমানও বাড়ছে । যা অন্যান্য বেসরকারী ব্যাংকের কাছে ঈর্ষার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদ ।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় , দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বলিষ্ট ভ’মিকা রাখার চিন্তা চেতনা নিয়ে ২০১৩ সালের শুরুর দিকে কয়েকজন উদ্যোক্তা মিলে “ ফারমার্স ব্যাংক ” প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন । এ স্বপ্ন যাত্রায় শরিক হতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী,সমাজ সেবক,সংগঠক আর রাজনীতিবিদরা এক কাতারে এসে ফারমার্স ব্যাংকের স্বপ্নদ্রষ্টার খাতায় নাম লেখান । ফলে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠা পেতে আর বেগ পেতে হয়নি । ব্যাংকটির গোড়াপত্তনের সাথে স্বপ্নদ্রষ্টাদের স্বপ্ন মিশে গিয়ে প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিক ড: মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে সামনে রেখে পথ চলার মাইল ফলক তৈরী করা হয় । প্রায় সাড়ে তিনমাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ফারমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তারা লাভ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স-ব্যবসায়ীক সনদ । ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল সনদ লাভের পর ফারমার্স ব্যাংক তার প্রথম শাখার কার্যক্রম শুরু করে একই বছরের ৩ জুন । রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা গুলশানেই ব্যাংকটির কর্পোরেট শাখার কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাংকটি দেশের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখার পথ প্রশস্ত করে নেয় ।
সুত্র আরও জানায় , ফারমার্স ব্যাংক যখন ব্যবসায়ীক লাইসেন্স পায় তখন এই ব্যাংকটির সাথে আরও ৮ টি বেসরকারী ব্যাংক লাইসেন্স পায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে । ৪ শ ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন দিয়ে কেন্দ্রিয় ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নেয় ‘ফারমার্স ব্যাংক’ ।ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধনের পরিমান ১৫‘শ কোটি টাকা । ২০ জন পরিচালকসহ ৫১ জন শেয়ার হোল্ডারের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে আজ ব্যাংকটির বিস্তৃতি ঘটে চলেছে সারা দেশে । গত অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকটির শাখার সংখ্যা ছিল ৩৪ টি । আরও ২ টি শাখার লাইসেন্স পাওয়া গেছে বলে সুত্র জানায় । এ ছাড়া আরও ২ টি শাখার লাইসেন্স প্রাপ্তির পথে । সব মিলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ সারাদেশে ব্যাংকটির শাখার সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৮ টি ।
সুত্র জানায় , গুলশান কর্পোরেট শাখা দিয়ে ফারমার্স ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পলাশবাড়ি শাখার কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে ১০ টি শাখার কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে । ৬ মাসের মাথায় এসে নতুন ব্যাংক হিসেবে ফারমার্স ব্যাংকের ১০ টি শাখার কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টিকে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক এবং একটি মাইল ফলক স্থাপনের নজির হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেকেই । ২০১৪ সালে এসে শাখার সংখ্যা দাঁড়ায় নতুন ১৬ টি শাখাসহ ২৬ টিতে । চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত আরও ৮ টি শাখার কার্যক্রম শুরুর পর ব্যাংকটির শাখার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ টি । বিগত আড়াই বছরের মধ্যে একের পর এক নতুন নতুন শাখার কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠে ‘দি ফারমার্স ব্যাংক ’ । ১ অক্টোবর খুলনা শাখার কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে এখন ব্যাংকটিতে আমানতকারীর সংখ্যা ৪৩ হাজারেরও বেশি । এত অল্প সময়ের মধ্যে বেসরকারী ব্যাংক হিসেবে ফারমার্স ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা ও গ্রাহকের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠাকে সাফল্য হিসেবেই দেখছেন পরিচালনা পরিষদ ।
সুত্র জানায়, শুরু থেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত দেশের বিভিন পেশার সাথে জড়িত ৫১ জন শেয়ার হোল্ডারদের নিয়ে ফারমার্স ব্যাংকের স্বপ্নের পথচলা । তাদের মধ্যে থেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ২০ জনকে নিয়ে পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয় ।এই পরিষদের অগ্রনী ভুমিকায় রয়েছেন স্বনামখ্যাত ড: মহিউদ্দীন খান আলমগীর । ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে গত ৩০ মাসেরও অধিক সময়ে দেশের উন্নয়নে ভ’মিকা রাখতে ফারমার্স ব্যাংককে নিবেদিত রেখেছেন ড: মহিউদ্দীন খান । ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন, ড: মো: আতহার উদ্দীন । আর পরিচালকদের আসনে নিজ নিজ যোগ্যতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন যথাক্রমে,মো: মাহবুবুল হক চিশতি (বাবুল চিশতি ), আজমত রহমান, হাফিজুর রহমান সরকার,মোহাম্মদ মাসুদ, মিসেস নাফিসা কামাল,মারুফ আলম ,মিসেস তানজিন আমান, মো: শাহাবুদ্দিন, মো: আবু আলম, সাইদ আহমেদ, মো: শরিফ চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক খান, ইঞ্জিনিয়ার মো: মেহেদি হাসান, মোরশেদ মুরাদ ইবরাহিম, মো: রফিকুল ইসলাম, মো: আবুল হোসাইন, চৌধুরী নাফিস সরাফত ও ড: হাসান তাহের ইমাম ।
ব্যাংকটিতে পরিচালনা পরিষদের বাইরে ৫ সদস্যের একটি নির্বাহী কমিটি রয়েছে । এই কমিটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন জামালপুরের বিশিষ্ট সজ্জন ব্যক্তিক্ত মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতি (বাবুল চিশতি ) । আর এই কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মিসেস নাফিসা কামাল ।
নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মো: মাহবুবুল হক চিশতি ( বাবুল চিশতি ) জানান, ফারমার্স ব্যাংকের শুরু থেকেই গ্রাহক ও আমানতকারীদের সেবার কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দরজা খোলা রাখা হয়েছে । সে সবের মধ্যে রয়েছে,মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প,মাসিক মুনাফা প্রকল্প,দ্বিগুন বৃদ্ধি আমানত প্রকল্প,মহিলা উদ্যোক্তা প্রকল্প,কৃষি যন্ত্রপাতি ঋন প্রকল্প,শিক্ষা ঋন প্রকল্প,নীড় ঋন প্রকল্প,চাহিদা ঋন প্রকল্প,গাড়ি ঋন প্রকল্প,ডাক্তার ঋন প্রকল্প,গৃহ ঋন প্রকল্প উত্যাদি ।তিনি জানান,দেশে অনেক বেসরকারী ব্যাংক রয়েছে । তাই গ্রাহক ও আমানতকারীদেরকে অন্যাণ্য বেসরকারী ব্যাংকের চেয়ে কত বেশি সেবা ও সুবিধা প্রদান করা যায় তার চিন্তা ভাবনা থেকেই সেজেছে ফারমার্স ব্যাংক । তাই এত স্বল্প সময়ের মধ্যে এই ব্যাংকটির শাখার সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। যার মধ্যে দিয়ে গ্রাহক ও আমানতকারীর সংখ্যাও বাড়ছে । ভবিষ্যতে এই ব্যাংক প্রতিযোগিতার বাজারে শুধু টিকেই থাকার চেষ্টা করবে না,গ্রাহকের সেবায় আরও পণ্য নিয়ে আসবে । শাখার সংখ্যাও বাড়াবে । দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে যা কিছু প্রয়োজন তার সবই ফারমার্স ব্যাংক করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন ।
অডিট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন চৌধুরী নাফিস সরাফত । আর ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন আজমত রহমান ।এ ছাড়া রয়েছে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটিও ।এই কমিটির চেয়ারম্যান মারুফ আলম ।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়ে আজ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন অভিজ্ঞ ব্যাংকার চৌধুরী মোশতাক আহমেদ । তিনি জানান,আমাদের ব্যাংকিং সেবা ও পণ্য স্বাধীন সত্বায় গ্রাহকের সমৃদ্ধির জন্য । তিনি জানান,নির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে ব্যাংকটির কার্যক্রম চলছে ।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় ,ব্যাংকটির প্রতি গ্রাহকদের উৎসাহী মনোভাবের কারনেই দিন দিন গ্রাহক ও আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি ঋনের কার্যক্রমও বেড়েছে । যার কারনে ব্যাংকটিতে আমানতের তুলনায় ঋন বিতরনের হার (এডিআর ) ৭৪ দশমিক ১৯ শতাংশ । ব্যাংকটিতে অস্তিত্বহীন কোনো প্রতিষ্ঠানের ঋন নেই এবং কাউকে জামানতবিহিন ঋন সুবিধা দেয়া হয়না ।