লন্ডন প্রতিনিধি:
করোনা মহামারি প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। ভয়াবহ এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে লন্ডনে জরুরি অবস্থা জারি করেছে লন্ডন মেয়র। শুক্রবার ৮ জানুয়ারী, মেয়র সাদিক খান ‘গুরুতর পরিস্থিতি‘র (মেজর ইনসিডেন্ট) ঘোষণা দেন, যা জরুরি অবস্থা জারির সামিল। এই সময়ে তিনি জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, বড় ধরনের কোনও হামলা বা ভয়াবহ দূর্ঘটনা এবং বিশেষত যেসব ঘটনায় মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি, জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়া, মানবজীবন, মানবকল্যাণ, অপরিহার্য সেবা, পরিবেশ কিংবা জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে সেসব ক্ষেত্রেই বৃটেনে সচরাচর ‘মেজর ইনসিডেন্ট‘ ঘোষণা করা হয়ে থাকে।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগী উপচে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনগনকে ঘরে থাকার আহব্বান জানিয়ে সাদিক খান বলেন, ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় লন্ডনের হাসপাতালগুলোর শয্যা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় আমরা গুরুতর পরিস্থিতির ঘোষণা দিচ্ছি। কারণ, আমাদের শহরে হুমকি হয়ে ওঠা করোনাভাইরাসের প্রকোপ সংকটময় মুহূর্তে পৌঁছে গেছে।
শুক্রবার ২৪ ঘন্টায় বৃটেনে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ১৩২৫ জনের, আর আক্রান্ত হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৩ জন। যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। এর আগের দিন (বৃহস্পতিবার) মৃতের সংখ্যা ছিল ১১৬২ জন এবং বুধবার ছিল ১০৪১ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা ৭৯ হাজার ৮৩৩ জন, আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৭২ জন। লন্ডনের কিছু কিছু জায়গায় এখনও প্রতি ২০ জনে একজনের শরীরে ভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক চাপ বেড়েছে হাসপাতাল আর অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে। প্রতিদিন প্রায় ৯ হাজারের অধিক ফোন কল রিসিভ করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বৃটেন এরই মধ্যেই ফাইজার/বায়োএনটেক এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা অনুমোদন করেছে এবং টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে তা অব্যাহত রেখা হয়েছে। তৃতীয় টিকা হিসাবে শুক্রবার থেকে মডার্নার টিকারও অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। তারপরও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না এ দেশটি। বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হিসাবে পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাজ্য।
বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের দিক থেকে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। মৃত্যুর বিবেচনায় করোনায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ব্রাজিল। দেশটি আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে থাকলেও মৃত্যু বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে। তবে আক্রান্তের দিকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারত মৃত্যু বিবেচনায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেম সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসএসই) তথ্য বলছে, শনিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮ কোটি ৮৮ লাখ ২৭ হাজার ৬২৯ জন ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৯ লাখ ১১ হাজার ৯৩৭ জনের। এছাড়াও উল্লেখযোগ্যহারে সুস্থ হয়েছেন ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার ৯৮০ জন।