অসহায় শিশু হৃদরোগীদের পাশে মুনতাদা এইড

lh pic
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমইচ)ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সহয়োগীতায় হৃদরোগে আক্রান্ত গরীব ও অসহায় শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে জটিল হৃদরোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে আন্তর্জাতিক চ্যারিটি বা মানবিক সাহায্য সংস্থা মুনতাদা এইড। মুনতাদা এইডের বিশ্ব বরেণ্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সদের সমন্ময়ে গঠিত চ্যারিটি টিম ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এ কার্যক্রমের আওতায় মুনতাদা এইড এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধ সহগ্র অপারেশন সহ বিশ্বব্যাপি প্রায় ২ সহগ্রাধিক গরীব শিশুকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হৃদরোগের জটিল অপারেশন ও চিকিৎসা প্রদান করেছে। রোগীর অপারেশন, হাসপাতাল খরচ ও ঔষধ সহ চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল খরচ বহন করেছে মুনতাদা এইড। সেইসাথে তার পরিবারকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করছে প্রতিষ্ঠানটি।

মুনতাদা এইডের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ টিম বাংলাদেশী চিকিৎসক ও নার্সদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষন ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে স্থানীয়ভাবে বড় ধরনের অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম করে তুলছে। যাতে ভবিষ্যতে বিদেশ মূখী প্রবণতা কমিয়ে জটিল অপারেশন পরিচালনায় স্থানীয় চিকিৎসক দল সফলতা অর্জন করতে পারে। মুনতাদা এইড ২০১৪ ও ২০১৫ এই দুই বছরে বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নিজ খরচে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দ্বারা পরিচালনা করেছে ২৫৬ টি হার্টের অপারেশন। আর ২০১৬ সাল থেকে স্থায়ীভাবে ঢাকার ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হসপাতালে গরীব হার্টের শিশুদের বিনা মূল্যে অপারেশন ও নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। বর্তমানে মুনতাদা এইড ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগে একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিট প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে। যেখানে সল্প খরচে গরীব ও অসহায় হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান জটিল অপারেশন পরিচালনা সহ সকলপ্রকার হার্টের চিকিৎসা প্রদান করা হবে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে জন্ম নেয়া শিশুদের মধ্যে এই রোগের হার দ্বিগুনেরও বেশি। ঢাকা সিএমএইচ পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি হাজারে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন শিশু রয়েছে যারা জটিল সব হৃদরোগে আক্রান্ত। আর জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশি শিশু দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত। মায়েদের পরিমিত নিউট্রেশনের অভাব, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, পারিবারিক সমস্যা, দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারনে জন্ম নেয়া শিশুদের একটা বড় অংশ হার্টের অসুস্থতা নিয়ে প্রতিবছর জন্ম গ্রহন করে। এ রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয় বহুল ও জটিল হওয়ায় এ শিশুদের অধিকাংশই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।ইউনিসেফের হিসেব মতে, পৃথিবীতে প্রতিদিন জন্ম নেয় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ্য শিশু। যাদের মধ্যে এক শতাংশ বা প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিশু পৃথিবীতে আসে হার্টের জটিল সব সমস্যা নিয়ে। পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সঠিক পরিচর্যার ব্যবস্থা থাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুরা ফিরে পায় তাদের স্বাভাবিক জীবন। বেড়ে উঠতে পারে আর পাচ‘জন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মত। কিন্তু অনুন্নত দেশগুলোতে এমন সমস্যায় আক্রান্ত প্রায় প্রতিটি শিশুই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরিচর্যার অভাবে সল্প সময়ের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মুনতাদা এইড এ সকল মানুষের কল্যানে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।

বিশ্বের বৃহৎ মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোর মধ্যে মুনতাদা এইড অন্যতম। বৃটেন ভিত্তিক এ চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩২ বছর ধরে আর্তমানবতার সেবায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করে চলেছে। মুনতাদা এইড তাদের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী প্রজেক্ট লিটিল হার্টের কারনে ২০১৫ সালে লাভ করেছে বৃটেনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ থার্ড সেক্টর এ্যাওয়ার্ড পদক। মুনতাদা এইড ১৪ টি দেশের ৬০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সম্পন্নয়ে গঠন করেছে উন্নতমানের মেডিক্যাল টিম। এ টিমের একমাত্র উদ্যেশ্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গিয়ে অসহায় হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদেরকে সেবা প্রদান এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে স্থানীয় সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা। বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত অথবা হার্টের অসুখ নিয়ে জন্ম নেয়া দরিদ্র পরিবারের শিশুদের কে সেবা দিতে মুনতাদা এইড বদ্ধ পরিকর। এরই ধারাবাহিকতায়, অর্থের অভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পারা পরিবারের সদস্যরা অথবা স্থানীয় ডাক্তাররা ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা গ্রহন করতে পারেন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমইচ) ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সাথে প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ করলে তারা রোগির অবস্থা ও অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় অবলম্বনের মাধ্যমে পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহন করবেন। জাকাতের টাকা নেয়ার মত রোগীদেরকেই কেবল মাত্র বিনা অর্থ খরচে এ সেবা প্রদান করা হয়। ডাক্তার অথবা হাসপাতাল কতৃপক্ষ তাদের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় করে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে অথবা সামান্য অর্থ দানের মাধ্যমে এ সেবা প্রদান করবেন।

মুনতাদা এইড বিশ্বাস করে, দারিদ্রতা হ্রাস, স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং শিক্ষা লাভের সুযোগ সমাজ উন্নয়নে অত্যাবশ্যক। শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ থেকে বিভাজন কমিয়ে সকলকে একত্রিত করার মত আকর্ষনীয় ও ভিন্নধর্মী কর্মপরিকল্পনার কারনে মুনতাদা এইড অন্য সকল চ্যারিটি বা এনজিও থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি বা যুদ্ধ বিগ্রহ যেখানেই মানবতার বিপর্যয় ঘটেছে মুনতাদা এইড জরুরী সাহায্য নিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে সেখানে পৌচ্ছেছে, দাড়িয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় মানুষের পাশে। সেইসাথে তাদের দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিটি অঞ্চলের জন্য সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা প্রনয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারনকে সাবলম্বী করে তুলতে সাহায্য করেছে। এছাড়াও আফ্রিকার দরিদ্র পিড়িত দেশগুলোতে শিক্ষা, জরুরী সেবা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ দীর্ঘ দিন যাবৎ মানবিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে মুনতাদা এইড। বাংলাদেশী বংশদ্ধুত চ্যারিটি বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদের নেতৃত্বে মুনতাদা এইডের অভিজ্ঞ ও দক্ষ টিম বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোতে বিশেষ করে বাংলাদেশে দারিদ্র বিমোচন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে কাজ করছে। সেইসাথে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরনার্থীদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষন ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। সাধারন মানুষের সহায়তাকে সাথে নিয়ে বিশ্বকে অভাবমুক্ত ও বাসযোগ্য করে গড়ে তোলাই মুনতাদা এইডের মূল উদ্যেশ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published.