ফারমার্স ব্যাংকের পেছনে লেগেছে একটি মহল

তোফাজ্জল হোসেন কামাল : মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পোষ্যদের কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার রেখে চতুর্থ প্রজন্মের বেসরকারী ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে দি ফারমার্স ব্যাংক’ । কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সকল শর্ত পুরন করেই ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল প্রধান কার্যালয়ের লাইসেন্স পায় ব্যাংকটি । এর দু‘মাস পর ৩ জুন রাজধানীর গুলশানে কর্পোরেট শাখার কার্যক্রম চালুর মধ্যে দিয়ে ব্যবসা শুরু করে ফারমার্স ব্যাংক । বিগত আড়াই বছরে ব্যাংকটি দেশের উল্লেখযোগ্য স্থানে ৩৪ টি শাখার কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে ৪৩ হাজারেরও অধিক আমানতকারী সংগ্রহ করে আর্থসামাজিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভ’মিকা রাখার প্রয়াস পেয়েছে । অল্প সময়ের মধ্যে এই এগিয়ে চলার গতি আজ ঈর্ষার কারন হয়ে দেখা দিয়েছে । এখন এই ব্যাংকটির পেছনে লেগেছে একটি মহল । ওই মহলটির পক্ষ থেকে চলছে ফারমার্স ব্যাংককের গতি রোধ করার ষড়যন্ত্র ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুত্র জানায়,নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে ২০১২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক । ৩০ নবেম্বরের মধ্যে অফেরতযোগ্য ১০ লাখ টাকার জামানতসহ আবেদন করতে বলা হয় আগ্রহীদের । বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মোট ৩৭ টি আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা পড়ে , যার মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে ১৬ টি আবেদন বিবেচনার জন্য রাখা হয় । এরপর প্রধানমন্ত্রী,অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো ঘুরে সেই তালিকা আরও যাচাই – বাছাইয়ের পর অর্থ মন্ত্রনালয় থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে । সেই তালিকার ভিত্তিতেই নয়টি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক । নতুনভাবে অনুমোদন পাওয়া ৯ টি ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম দি ফারমার্স ব্যাংক লি. ।

সুত্র জানায়, ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর বুধবার বেসরকারী খাতে নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আবেদন প্রাথমিকভাবে যাচাই- বাছাইয়ের সকল কাজ শেষের পর আবেদনগুলো যোগ্য বিবেচিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক । এর আগে আবেদনগুলো প্রাথমিক স্তরের যাচাই- বাছাইয়ের জন্য গঠিত কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) তত্বাবধানে তিন মাস ধরে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করে । প্রাথমিক,টেকনিক্যাল ও মুল্যায়ন এ তিন স্তরে আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড বা মুল্যায়ন কমিটির অনুমোদন পাওয়ার পর ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সুযোগ দেয়া হয় । এই সুযোগ পাওয়ার পর নতুনভাবে অনুমতি পাওয়া ৯ টি ব্যাংকের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকসহ ৭ টি ব্যাংক তাদের কার্যক্রম শুরু করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যবসায়িক প্রস্তাব জমা দেয় ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর মঙ্গলবার । ওই দিনই ছিল কার্যক্রম শুরুর আবেদন করার শেষ দিন । এ ছাড়া যে কয়টি ব্যাংক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের ব্যবসায়িক প্রস্তাব জমা দিয়েছে,সেগুলো হচ্ছে-দুটি এনআরবি ব্যাংক,ইউনিয়ন ব্যাংক,মিডল্যান্ড ব্যাংক,মেঘনা ব্যাংক ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক । সে সময়ের মধ্যে মধুমতি ও এনআরবি ব্যাংক তাদের ব্যবসায়িক প্রস্তাব জমা দিতে ব্যর্থ হয় । তারা তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সময় প্রার্থনা করে জানায়,মধুমতি ব্যাংকের দু‘মাস আর এনআরবি ব্যাংকের তিনমাস সময় লাগবে ।মধুমতি ব্যাংকের নেপথ্যে আছেন আওয়ামীলীগের এমপি শেখ ফজলে নূর তাপস ।আর এনআরবি ব্যাংকের পেছনে আছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নিজাম চৌধুরী ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুড়ান্ত অনুমোদনের পর লাইসেন্স নিয়ে একই সময়ে ব্যবসা শুরু করে ফারমার্স ব্যাংকসহ আরও ৬ টি ব্যাংক । পরবর্তীতে মধুমতি ও এনআরবি ব্যাংকও ব্যবসা শুরু করলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অংশীদার হয়ে দাঁড়ায় নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত ৯ টি ব্যাংক ।এই ৯ টি ব্যাংকের মধ্যে শুরু হয নানামুখী প্রতিযোগিতা । এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে চতুর্থ প্রজন্মের ৯ টি ব্যাংকের পণ্য ও সেবার মানও বিভিন্নমুখী হয়ে উঠে । গ্রাহক ও আমানত সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় নেমে দি ফারমার্স ব্যাংক দেশের আর্থসামাজিক খাতে আলোচনার পাদপ্রদীপে উঠে আসে । নানা ধরনের পণ্য ও সেবা দিয়ে ফারমার্স ব্যাংক এক এক করে এগিয়ে চলতে শুরু করে । আড়াই বছরের মাথায় এসে ফারমার্স ব্যাংকের শাখার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪ টি । আর আমানতকারীর সংখ্যাও হয় ৪৩ হাজারেরও অধিক । এই অল্প সময়ের ব্যবধানে অন্য ৮ টি ব্যাংকের সাথে পাল্লা দিয়ে ফারমার্স ব্যাংক প্রতিযোগিতার শীর্ষে স্থান করে নেয় । পরিচালনা পরিষদ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির নিরলস প্রচেষ্টা আর ব্যাংকিং দক্ষতার সম্মিলনে যখন ব্যাংকটি তার গ্রাহকদের হৃদয়ে স্থান করে নিচ্ছে তখনই অদৃশ্য এক মহলের ইন্ধনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংকের পেছনে ষড়যন্ত্রের কলকাঠি নাড়ছে । অভিযোগ উঠেছে,প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেও যখন ফলপ্রসু কিছু করে উঠতে পারছেনা,গ্রাহকদের কাছে টানতে ব্যর্থ তখনই একটি মহল ফারমার্স ব্যাংকের পেছনে লেগেছে । ওই মহলটিই অসৎ উদ্দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যবহার করছে ।

ফারমার্স ব্যাংক সুত্র জানায়,২০১৩ সালের জুনের প্রথম সপ্তাহে ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরুর পর পরবর্তী বছর ২০১৪ সালের এপ্রিলে এসে নতুন ৯ টি ব্যাংকের ৩ হাজার ৬‘শ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহের ঘটনায় ওই সময়ে দেশজুড়ে যে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিনত হয়,তাতে ফারমার্স ব্যাংকও ছিল তালিকায় ।

তৎকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যšত সময়ে বেসরকারি ছয়টি ও প্রবাসীদের তিনটি ব্যাংক মিলে তিন হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক ৮৫০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, ফারমার্স ব্যাংক ২০৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা, মধুমতি ব্যাংক ২০৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংক ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা, মেঘনা ব্যাংক ৩১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, সাউথ-বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ৬৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, এনআরবি ব্যাংক ২৫৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ৬৯৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং এনআরবি গ্লোবাল ১৩২ কোটি ১৫ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে।

একই সময়ে নতুন ৯ ব্যাংক মিলে ঋণও দিয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার মতো। গত ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যšত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণ ও সংগৃহীত আমানতের অনুপাতের (এডিআর) গড় দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশ। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের এডিআর ছিল ৭২.৮৩ শতাংশ, ফারমার্স ব্যাংকের এডিআর ২৩.৪৬ শতাংশ, মধুমতি ব্যাংকের এডিআর ১৫ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংকের এডিআর ৬৪.০২ শতাংশ, মেঘনা ব্যাংকের এডিআর ৬৫.৬৫ শতাংশ, সাউথ-বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের এডিআর ৬৫.৩৬ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংকের এডিআর ২৪.১০ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এডিআর ৭৩.৯৬ শতাংশ এবং এনআরবি গ্লোবালের এডিআর ৮৩.৭২ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে তার মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করতে পারে। সেই নির্দেশনার আলোকেই ফারমার্স ব্যাংক তাদের পন্য নিয়ে গ্রাহকদের দোরগোড়ায় গিয়ে দাঁড়ায় । ব্যাপক সাড়াও মেলে ।গ্রাহকদের সাড়ার কারনেই আজ ফারমার্স ব্যাংক দেশের বেসরকারী ব্যাংকগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে আছে ।

ব্যাংকগুলোর নতুন শাখা খোলার প্রতিযোগিতার চিত্রে দেখা যায়,একই বছরের মার্চ পর্যšত নতুন ব্যাংকগুলো মোট ৮৭টি শাখা খুলেছে। এর মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ১২টি, এনআরবি ব্যাংক ছয়টি, এনআরবি গ্লোবাল তিনটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ১৭টি, সাউথ-বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংক ১৩টি, ফারমার্স ব্যাংক ১২টি, মিডল্যান্ড ব্যাংক ১২টি এবং মধুমতি ও মেঘনা ব্যাংক ছয়টি করে শাখা খুলেছে। এর মধ্যে অর্ধেক শাখাই গ্রামে। ওই সময় পর্যন্ত প্রতিটি ব্যাংকে গড়ে ২০০ কর্মী কাজ করছেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুত্রের দাবী । সে হিসেবে ওই সময়ে সব মিলিয়ে দুই হাজারের বেশি কর্মসংস্থান হয়েছিল চতুর্থ প্রজন্মের এই ব্যাংকগুলোতে ।

ফারমার্স ব্যাংক সুত্র জানায়, গ্রাহক সেবার মান ও পণ্যের চাহিদার কারনেই ব্যাংকটির গ্রাহক ও আমানতকারীর সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলেছে । তার সাথে বাড়ছে ঋন বিতরনের হারও । ব্যাংকটির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৪ সাল শেষে ব্যাংকটির মোট ঋন ও অগ্রিমের পরিমান ছিল ১ হাজার ৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ।যা চার মাস পর ৪৫৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৬১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারমার্স ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতি (বাবুল চিশতি) বলেন, নতুন ব্যাংকগুলো কম স্প্রেড (ঋণ ও আমানতের সুদ হারের ব্যবধান) নিয়ে এগোচ্ছে। এ কারণে তাদের পক্ষে সেবার মান বাড়ানো সহজ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষি ও এসএমই ঋণ বিতরণে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তা ছাড়া ঋণ বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে সব খাতে ঋণ বিতরণের চেষ্টা করছি। আজকে নতুন ব্যাংকগুলোর সাফল্যই বলে দেয় দেশে আরো ব্যাংকের দরকার ছিল। নতুন ব্যাংকের দরকার আছে বা ছিল না- এ প্রশ্নের আর অবকাশ নেই। আমরা নতুন হলেও ভালো সাড়া পাচ্ছি।’

বাবুল চিশতি বলেন, ‘এত প্রতিযোগিতার মধ্যে নতুন ব্যাংককে টিকে থাকতে হলে একমাত্র সেবা দিয়েই টিকে থাকতে হবে। সে জন্য আমরা চেষ্টা করছি সেবার মান বাড়াতে। এর পাশাপাশি আমানতের নিরাপত্তা বিধানেও আমরা সচেষ্ট।’

যে কারনে ষড়যন্ত্র

ফারমার্স ব্যাংকের সফল উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম উদ্যেক্তা মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতি (বাবুল চিশতি ) । তাঁর বাড়ি জামালপুরের বকশিগঞ্জে । ছোট বেলা থেকেই অনেক পরিশ্রম করে তিল তিল করে নিজকে এগিয়ে নিয়েছেন ।গোটা জামালপুর জেলার বাইরেও পাশের জেলা শেরপুর,ময়মনসিংহ,নেত্রকোনায় রয়েছে তার বিচরন ।নিজ জেলার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে গিয়ে এক এক করে গড়ে তোলেন বকশিগঞ্জে জুট স্পিনিং মিল,জুতার কারখানা,রাশেদ রিমি ফিলিং স্টেশন,বনফুল ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স,একাধিক মৎস্য-কৃষি ও গবাদি পশুর খামারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান । এ ছাড়া রয়েছে অয়েল ট্যাংকারও । শুরুতেই ঠিকাদারী ব্রবসার মাধ্যমে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার প্রয়াস পান ।তার গড়ে তোলা সে সব শিল্প প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায গোটা জামালপুরবাসীর কাছে পুজনীয় হয়ে উঠেন বাবুল চিশতি । পরবর্তীতে ফারমার্স ব্যাংকের সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজকে আত্মপ্রকাশের পর ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করায় তিনি এলাকাবাসীর কাছে অদ্বিতীয় হয়ে উঠেন ।আর দেশবাসীর কাছে পরিচিতি পান একজন সফল ব্যবসায়ীর এবং সমাজ সেবকের । তিনি নির্বাচিত হন ফারমার্স ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান । এটাকে এবং বাবুল চিশতির এই উত্তরোত্তর সাফল্যে আর উত্থানকে মেনে নিতে পারছেন না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষে থাকা একজন কর্মকর্তা ।ওই শীর্ষ কর্মকর্তার বাড়িও জামালপুর জেলায় । ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষে থাকার সুযোগ নিয়ে ওই পদপদবীকে পূঁজি করে ফারমার্স ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান বাবুল চিশতিকে কি ভাবে দেশজাতি ও সমাজের কাছে ছোট করা যায়,সে চিন্তা ভাবনার ফসলই হচ্ছে ফারমার্স ব্যাংকের পেছনে লেগে পড়ার কারন । আর বাবুল চিশতি যাতে ফারমার্স ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান থাকতে না পারেন,সেটারও একটা বিহিত করা । এর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা তার অধীনস্থ ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি ) কে ফারমার্স ব্যাংকের দোষ ত্রুটি খোঁজার কাজে নিয়োজিত করেন । বিআরপিডি বিভাগও মওকা পেয়ে ওই শীর্ষ কর্মকর্তাকে খুশি করার মানসে মনগড়া এক অভিযোগ উত্থাপন করে চলতি বছরের ১৭ মে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে একটি পত্র দেয় ।পত্রে ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতি (বাবুল চিশতি ) কে ওই কমিটি থেকে অব্যাহতি প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয় ।পত্রে বাবুল চিশতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ঋন প্রদানের অভিযোগ তোলা হয় ।অথচ ঋন প্রদানের ক্ষমতা ব্যাংকটির ব্রবস্থাপনা কমিটির ।পরিচালনা পরিষদ কোন ঋন প্রদানের ক্ষমতা রাখেন না ,তারা বড়জোর সুপারিশ করতে পারেন মাত্র ।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিআরপিডি শাখার মহাব্যবস্থাপক চৌধুরী মো: ফিরোজ বিন আলম স্বাক্ষরিত ওই পত্র পাওয়ার পর বাবুল চিশতি উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন (নং ৫৫৯৪ অব ২০১৫ ) করেন ।এই পিটিশনের পর চলতি বছরের ১৮ আগষ্ট উচ্চ আদালত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই নির্দেশনাকে পরবর্তী ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে ।

এর আগে ৮ মার্চ একই বিভাগ থেকে বাবুল চিশতিকে ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের অনুকুলে ঋন প্রদানের অনিয়মের জন্য কারন দর্শানো নোটিশ দেয় । এই নোটিশ পাওয়ার পর বাবুল চিশতি বিআরপিডি বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ১৬ মার্চ একটি জবাব দেন । জবাবে তিনি কেন্দ্রীয ব্যাংককে জানান,ডেলিগেশন অব বিজিনেস পাওয়ার অনুযায়ী সকল বিজিনেস মেমো ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কতৃপক্ষ কতৃক যথাযথ বিচার বিশ্লেষন করত: মতামতসহ নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয় ।সভায় উপস্থিত সকল সদ¯্র উপস্থাপিত মেমো পর্যালোচনা করে এবং সর্বসম্মতিক্রমে ঋন অনুমোদন অথবা নাকচ হয়ে থাকেন ।এখানে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন সুযোগ/অবকাশ নেই বলে ব্যাংককে জানান । সর্বদা ব্যাংকের স্বার্থ অক্ষুন্ন এবং আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষার বিষয়ে বদ্ধপরিকর ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিআরপিডি বিভাগ থেকে নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান বাবুল চিশতিকে অব্রাহতি প্রদানের যে নির্দেশনামুলক পত্র দেয়া হয় ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে,সেটিরও একটি জবাব দেয়া হয় ২৬ মে । পত্রে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ড: মহীউদ্দিন খান আলমগীর এমপি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে জানান,পৃথিবী ব্যাপি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় উন্নততর প্রযুক্তি প্রয়োগ,দ্রুততর সিদ্ধান্তায়নে ও ব্যাংকিং সেবা বিস্তারনে বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী সর্বাতœক কার্যক্রম ভুমিকা পালন করার জন্য ব্যাঙক দৃঢ় প্রতিজ্ঞ । এই প্রেক্ষিতে ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ (১) এর ৪৫ (১)(ঘ) ধারা অনুযায়ী যথার্থ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে বিদ্যমান নির্বাহী কমিটির পরিবর্তন জনস্বার্থিক হবে বলে বিবেচনা করা যায় না ।

এ সবের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও ঈর্ষাকাতর হয়ে উঠে । ফারমার্স ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ঋন বিতরন নিয়ে উঠে পড়ে লাগে । কোথায় কোন ব্যতয় হয়েছে তার খোঁজ নিতে শুরু করে ।ওই শীর্ষ কর্মকর্তাকে সন্তুষ্ট করতে একের পর এক শাখাগুলোতে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করা হয ।এর অংশ হিসেবেই চলতি বছরের অক্টোবরে ফারমার্স ব্যাংকের শ্যামপুর শাখায় বিআরপিডি বিভাগের দু‘জন কর্মকর্তা অডিট করেন ।তারা ওই সময়ে ওই শাখা থেকে চাহিদা মাফিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে এসে শীর্ষ কর্মকর্তাকে খুশি রাখতে গিয়ে নানা ধরনের আপত্তি তুলে ঋন প্রদানে অনিয়ম ঘটেছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন সংশ্লিষ্ট শাখার প্রধানের কাছে ।ওই দুই কর্মকর্তার মধ্যে একজনের নামের আদ্যাক্ষর‘ম’ অপরজনের ‘ন’ ।পরে তাদের ওই প্রতিবেদনের সুযোগ নিয়ে ফারমার্স ব্যাংককের পেছনে লাগার আরও একটি সুযোগ পেয়ে যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ ষড়যন্ত্রকারীরা ।গত ৩ নবেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এফআইসিএসডি বিভাগ থেকে ফারমার্স ব্রাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে দুটি ভিন্ন স্মারকে দুটি পত্র দেয়া হয় ।পত্র দুটিতে স্বাক্ষর করেন ওই বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো: ইকবাল হোসেন ।

ওই চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে এফআইসিএসডি বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো: ইকবাল হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান,আমি উপরের নির্দেশ প্রতিপালন করেছি মাত্র ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *